ব্লগার, ইউটিউবারদের যে কয়টি মূল লক্ষ্য থাকে তার মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে গুগল অ্যাডসেন্স এপ্রুভাল পাওয়া এবং তার মাধ্যমে আয় করা। অনেক বিকল্প থাকলেও গুগল অ্যাডসেন্স অধিক ইউজার ফ্রেন্ডলি হওয়ায় এটি একটু বেশিই জনপ্রিয়। আমরা অনেকেই বিভিন্ন ব্লগসাইট বা ইউটিউব চ্যানেল চালু করে সেখান থেকে অ্যাডসেন্সের মাধ্যমে আয় করতে চাই। কিন্তু যখনই আমরা অ্যাডসেন্স অ্যাপ্রুভাল পাই না, পেতে ব্যর্থ হই তখন স্বাভাবিকভাবেই আমরা হতাশ হয়ে যাই। আজ আমরা জানব, কী কী কারণে Google AdSense এপ্রুভাল পাওয়া যায় না।
১. গুগল অ্যাডসেন্স নীতিমালা
গুগল অ্যাডসেন্স পেতে চাইলে অবশ্যই আপনাকে যে কাজটি করতে হবে তা হচ্ছে গুগল অ্যাডসেন্স নীতিমালা মেনে চলতে হবে, নীতিমালা মেনেই আপনাকে আপনার ব্লগ বা ইউটিউবের কন্টেন্ট সাজাতে হবে। এটি না পারলে অ্যাডসেন্সের আশা করার উপায় নেই। অ্যাডসেন্সের নীতিমালা গুলো আমরা আর আলাদা করে বলব না। আপনি এটা গুগলের থেকেই জেনে নিতে পারবেন। সেজন্য পড়ুন: AdSense Program Policies। আশা করি এখান থেকে আপনি আপনার অনেক গুলো প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।
২. কন্টেন্ট
গুগল অ্যাডসেন্স অ্যাপ্রুভাল না পাওয়ার পেছনে কন্টেন্ট রিলেটেড অনেকগুলো ফ্যাক্টর কাজ করে থাকে। তারমধ্যে অন্যতম কয়েকটি হলো:
- মৌলিক কন্টেন্ট না থাকা।
- কপিরাইট কন্টেন্ট ব্যবহার করা।
- গুগল ট্রান্সলেটর ব্যবহার করে ইংরেজি বা অন্য ভাষার কন্টেন্টকে সরাসরি বাংলা করে চালিয়ে দেয়া (যে কোনো এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় নেয়া।)
- মানসম্মত কন্টেন্ট না থাকা।
- ছোট কন্টেন্ট।
- এডাল্ট কন্টেন্ট
এই প্রত্যেকটি বিষয় নিয়ে আলাদাকরে কিছুটা আলোচনা করা হলো।
ক) মৌলিক কন্টেন্ট না থাকা
গুগল অ্যাডসেন্স পেতে গেলে অবশ্যই মৌলিক কন্টেন্ট প্রয়োজন। মৌলিক কন্টেন্ট বলতে আমরা মৌলিক গল্পের সিনেমার মতো ব্যাপার বুঝাচ্ছি না, অর্থাৎ কোনো একটি টপিক নিয়ে আগে লেখা হয়ে গেছে, অন্য কোনো সাইট কোনো একটি টপিক নিয়ে লিখে ফেলেছে তাই আপনি আর লিখতে পারবেন না বা লিখবেন না বিষয়টা মোটেও এমন না। বরং যে কন্টেন্টটি বেশি জনপ্রিয়, মানুষ সেটি নিয়েই লিখবে এটিই স্বাভাবিক। তবে মৌলিক বলতে বুঝানো হয়েছে লেখার উপকরণ, ভঙ্গিমা, তথ্য-উপাত্ত ইত্যাদি।
ধরুন কেউ একজন "গুগল অ্যাডসেন্স না পাওয়ার কারণ গুলো কী কী?" এই টাইটেলে একটি কন্টেন্ট আগেই লিখেছে। এখন আপনিও চাচ্ছেন এই টপিক নিয়েই লিখতে। এতে কোনো সমস্যা নেই, সমস্যা হবে তখন, যখন আপনি আপনার মতো না লিখে তার মতো করেই লিখে যাবেন, সে যেই বিষয়গুলো উল্লেখ করেছে, আপনিও যদি সেসবই উল্লেখ করেন, তার মতো করেই লেখেন তবে লেখার মৌলিকতা থাকে না। আপনার লেখাকে মৌলিকতা দিন। এটি সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ গুগল অ্যাডসেন্স অ্যাপ্রুভাল পেতে।
খ) কপিরাইট কন্টেন্ট ব্যবহার করা
অন্যের কোনো কন্টেন্ট নিজের বলে চালিয়ে দেয়া, অন্যের একাধিক কন্টেন্টকে কেটেছিড়ে একটি বানানো কিংবা অন্য অনেক জনের অনেকগুলো কন্টেন্টকে একটি বানানোই কপিরাইট। বিভিন্নভাবে কপিরাট করা যায়, যার কোনোটিই নৈতিক না, কোনোটিই আপনাকে অ্যাডসেন্স পর্যন্ত পৌছে দেবে না। আপনার অ্যাডসেন্সের পথে অন্তরায় হয়েই দাঁড়াবে বরংচ। অনেকে একটু এডিট করে দিয়ে দিয়ে সাধারণ প্লেজিয়ারিজম চেকার দিয়ে চেক করে ১০০% ইউনিক দেখেই খুশিতে কাচুমাচু হয়ে যায় এই ভেবে যে, তারা গুগলকে বোকা বানিয়েছে। কিন্তু মনে রাখার বিষয় হচ্ছে, এটি সম্ভব না। সাময়িকভাবে কখনো কখনো সম্ভব হলেও গুগল অ্যালগরিদমের যেকোনো কোর আপডেটেই আপনি ধরা পরে যেতে পারেন। তাই কপিরাইট কন্টেন্ট ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। টেক্সট, ছবি, ভিডিও, অডিও এসব ক্ষেত্রেও কপিরাট করবেন না।
গ) ট্রান্সলেটেড কন্টেন্ট
স্বাভাবিক অবস্থায় ট্রান্সলেটেড কন্টেন্ট ভালোই। আপনি যথাযথ ক্রেডিট দিয়ে যদি কোনো কন্টেন্ট ট্রান্সলেট করেন (অনেকটা বই অনুবাদের মতো), তবে তা খুব একটা দোষের না। তবে এটিও অনুচিত অ্যাডসেন্সের জন্য। আর অনেকে যেটা করে তা হচ্ছে, কোনো এক ভাষার একটি কন্টেন্টকে গুগল ট্রান্সলেটর ব্যবহার করে সরাসরি অন্য ভাষায় অনূদিত করে ওইভাবেই পাবলিশ করে দেয়া। এটি জঘন্য কাজ এবং জঘন্য ভুল। এখানে একদিকে চুরি করা (কপিরাইট) হচ্ছে, অন্যদিকে আরেকটি নতুন অপরাধ হচ্ছে। এমন কন্টেন্ট দিয়ে অ্যাডসেন্সের আশা করা অবান্তর।
ঘ) মানসম্মত কন্টেন্ট না থাকা
এমন অনেক ব্লগার আছেন যারা মনে করেন কন্টেন্ট দিলেই হলো। সংখ্যাই আসল, মান না। কিন্তু মনে রাখবেন কোয়ালিটি আর কোয়ানটিটি দুটোই সমানভাবে প্রয়োজন। অনেক সময় কোয়ানটিটি কম থাকাটাও দোষের না, তবে কোয়ালিটি খারাপ হওয়া, নিম্নমানের কন্টেন্ট দেয়া অনেক বড় দোষের কাজ। নিম্নমানের টপিক নির্ধারণ করা আরও বড় দোষ। এসব কাজে এপ্রুভাল পাওয়া থেকে আটকে যাওয়াটাই স্বাভাবিক।
ঙ) ছোট কন্টেন্ট
অ্যাডসেন্স পেতে হলে আপনাকে একটু বড় কন্টেন্টের দিকে যেতে হবে। আপনি ৩০০-৪০০ শব্দে কন্টেন্ট লিখতে পারেন, তবে ১০০০-১৫০০ বা তার থেকেও বড় কন্টেন্টও আপনাকে লিখতে হবে সমান তালে। তবে ১০০-২০০ শব্দের কন্টেন্ট ভুলেও না। অন্তত ৫০০ শব্দ রাখার চেষ্টা করবেন কন্টেন্টে এবং তা টপিক কেন্দ্রিকই, উলটাপালটা কথা বার্তা দিয়ে না। ছোট কন্টেন্ট অ্যাডসেন্স পেতে আপনাকে অসুবিধার মুখে ফেলতে পারে স্বাভাবিকভাবেই।
চ) এডাল্ট কন্টেন্ট
কোনো রকম পর্নোগ্রাফি-তো দূরের কথা, যেকোনো ধরনের এডাল্ট কন্টেন্টই গুগলের অপছন্দের। তাই আপনার সাইটে যদি ১৮+ কন্টেন্ট থাকে, তবে আপনার জন্য অ্যাডসেন্সের আশা করার কোনো অপশন খোলা থাকবে না।
৩. প্রাইভেসি পলিসি পেজসহ আরও কিছু পেজ
গুগল অ্যাডসেন্স এপ্রুভাল পেতে চাইলে আপনাকে কয়েকটি পেজ আপনার ওয়েবসাইটে রাখতেই হবে। কী পেজ সেগুলো এবং তাতে কী থাকবে- তা জেনে নেয়া যাক।
Privacy Policy
এই পেজে আপনার ভিজিটরদের নিরাপত্তা, তাদের দেয়া তথ্য গুলো আপনি কীভাবে ব্যবহার করবেন, তাদের সম্মতি ছাড়া আপনি কোন কোন তথ্য নিতে চাচ্ছেন এবং কেন?- এই সকল বিষয় স্পষ্ট করে লিখে দিতে হবে। লগ ফাইলস, কুকিস ইত্যাদি নিয়েও তথ্য স্পষ্ট করে দিতে হবে। এখন আপনি হয়তো এসব বিষয়ে এক্সপার্ট না, তাই এসব ক্ষেত্রে আপনাকে সাহায্য করতে আছে অনেক গুলো ফ্রি প্রাইভেসি পলিসি জেনারেটর। আপনি সেখান থেকে একটি ব্যবহার করতে পারেন অনায়াসেই। প্রাইভেসি পলিসি পেজ ছাড়া অ্যাডসেন্স পাওয়া সম্ভব হবে না।
About Us
এই পেজটিও বাধ্যতামূলক একটি পেজ। এই পেজে আপনার সাইটটি কী সম্পর্কে কন্টেন্ট দেয়, কেমন কন্টেন্ট দেয়, মিশন কী, ভিশন কী এসব বিষয় ভিজিটরদের জন্য ক্লিয়ার করে দিতে হবে।
এমনভাবে Disclaimer, Terms and Conditions, Contact Us পেজগুলোও ভালোভাবে তৈরি করতে হবে অ্যাডসেন্স পেতে চাইলে। এজন্য আপনি অনায়াসে অনলাইন জেনারেটর ব্যবহার করতে পারেন।
৪. লোডিং স্পিড
আপনার সাইটের লোডিং স্পিড আপনার অ্যাডসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে যেমন একটি ফ্যাক্টর, তেমনি আপনার সাইটের কন্টেন্ট গুলো গুগল সার্চে উপরের দিকে আসার ক্ষেত্রেও একটি ফ্যাক্টর। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, লোডিং স্পিড খুব বেশি বাজে হলে আপনার সাইটে ইউজার আসবে না, ইউজার এক্সপেরিয়েন্স এতে করে খারাপ হবে। তাই লোডিং স্পিড ভালো রাখার চেষ্টা করতে হবে।
এজন্য আপনাকে যে কাজ গুলো করতে হবে তা হলো,
- ভালো হোস্টিং ব্যবহার করা।
- কম সাইজের ছবি ব্যবহার করা।
- ভালো থিম ব্যবহার করা।
- লোগোর সাইজ ৩-৫ কেবিতে নিয়ে আসা ইত্যাদি।
মনে রাখবেন, ভালো স্পিডের জন্য ভালো হোস্টিং এবং ভালো থিম দুটো অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর ইমেজের কোয়ালিটি ঠিক রেখে কমানোর প্রক্রিয়া জানতে পড়ুন: ছবির কোয়ালিটি ঠিক রেখে ইমেজ সাইজ কমানো যায় কিভাবে?
৫. ভালো থিম ব্যবহার করা
সাইট স্পিড বাড়ানোর জন্য ভালো থিম প্রয়োজন সেটা তো একটু আগেই বললাম। এছাড়াও অনেক কিছুর জন্যই ভালো থিম ব্যবহার করতে হয়। এসইও ফ্রেন্ডলি থিম, অ্যাডসেন্স ফ্রেন্ডলি থিম ব্যবহার করা এপ্রুভাল পাওয়ার ক্ষেত্রে একটি বড় নিয়ামক।
৬. স্প্যাম করা বা অন্য কোনো স্প্যাম সাইটের লিংক যুক্ত করা
আপনি যদি যেকোনো ধরনের স্প্যাম করেন বা আপনার সাইটে অন্য যে কোনো ধরনের স্প্যাম করে এমন সাইটের লিংক যুক্ত করেন, সেক্ষেত্রে স্প্যামার হিসেবে কাউন্টেড হয়ে আপনাকে গুগল অ্যাডসেন্স থেকে বঞ্চিত হওয়া লাগতে পারে। তাই স্প্যাম করার চেষ্টা করবেন না।
আরও কিছু কারণ
অতিরিক্ত পরিমাণে পপ আপ যুক্ত করা, মাদকের প্রমোট করা, কোনো অপরাধমূলক কর্মকান্ডের প্রমোট করা, কোনো জাতি বা গোষ্ঠি বা ধর্মকে নিয়ে বাজে কন্টেন্ট লেখা, উগ্রতা ছড়ানো ইত্যাদি বিভিন্ন কারণেও গুগল অ্যাডসেন্স অ্যাপ্রুভাল পাওয়া যায় না।
কিছু ভুল ধারণা
গুগল অ্যাডসেন্স না পাওয়া নিয়ে, এবং পাওয়ার পর ডিসএবল হয়ে যাওয়া নিয়ে অনেকের মধ্যেই কিছু ভুল ধারণা রয়েছে। এরকম অল্প কয়েকটা ভুল ধারণার অবসান ঘটানোর চেষ্টা করা হলো।
ক) ট্রাফিক কম থাকলে অ্যাডসেন্স পাওয়া যায় না?
ট্রাফিক কম থাকলে অ্যাডসেন্স পাওয়া যায় না- এটিও মোটেও সঠিক কথা নয়। অ্যাডসেন্স পাওয়া না পাওয়ার সাথে ট্রাফিকের কোনো সম্পর্ক নেই। আপনি শূন্য ট্রাফিক নিয়েও অ্যাডসেন্স পেতে পারেন কন্টেন্ট, থিম ইত্যাদি ভালো হলে। তবে অল্প ট্রাফিক থাকলে অ্যাডসেন্স থেকে খুব একটা ইনকাম করা যায় না।
খ) ফেসবুক থেকে ট্রাফিক গেলে অ্যাডসেন্স পাওয়া যায় না?
এটিও প্রচলিত ভুল ধারণা গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি। অনেকেই মনে করেন শুধু গুগল বা অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিন থেকেই ট্রাফিক পেতে হবে অ্যাডসেন্স পেতে হলে বা অ্যাডসেন্স টিকিয়ে রাখতে হলে। এটি একটি ভুল কথা। এমন অনেক সাইট আছে যারা মূলত ফেসবুক থেকে পাওয়া ট্রাফিকের উপরই নির্ভরশীল।
গ) ওয়েবসাইটের বয়স কম হলে অ্যাডসেন্স পাওয়া যায় না?
এখানে দুটি মত প্রচলিত। একটি হচ্ছে আসলেই ২-৩ মাসের সাইটকে গুগল অ্যাডসেন্স দেয় না, অন্যটি হচ্ছে ১০-১৫ দিন বয়সেই অ্যাডসেন্স পাওয়া সম্ভব। একেবারেই পাওয়া যায় না- এটিও যেমন ভুল, আবার পাবেই পাবে- এটিও ভুল ধারণা গুলোর একটি।
চেষ্টা করা হয়েছে গুগল অ্যাডসেন্স এপ্রুভাল না পাওয়ার মূল কারণগুলো ব্যাখ্যা করার। আপনাদের কারো কোনো জিজ্ঞাসা থাকলে করতে পারেন আমাদের ফেসবুক পেজে। ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন- ডিফারেন্ট মার্কেটিং- এর সাথেই থাকুন।
Do Not Enter Spam Links!