ইমেইল মার্কেটিং এর সম্পূর্ণ গাইডলাইন (PDF Download)

আপনি যদি ডিজিটাল মার্কেটিং দুনিয়া সম্পর্কে মোটামুটি লেভেলেরও জ্ঞান রাখেন তবে ইমেইল মার্কেটিং শব্দটি আপনি অবশ্যই শুনে থাকবেন। ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হলে ইমেইল মার্কেটিং সম্পর্কেও জানতে হবে। আজকে আমরা এই আর্টিকেলে জানব ইমেইল মার্কেটিং কী? কেন? কীভাবে? 

ইমেইল কী তা আমরা সবাই জানি। তাহলে ইমেইল মার্কেটিং কী? এবং এই ইমেইল দিয়ে আসলে মার্কেটিং করে কীভাবে? তাহলে শুরু করা যাক।

ইমেইল মার্কেটিং এর সম্পূর্ণ গাইডলাইন (PDF Download)

ইমেইল মার্কেটিং কী?

ইমেইলের মাধ্যমে পণ্যের বিজ্ঞাপন দেয়াকেই ইমেইল মার্কেটিং বলে। বর্তমান সময়ে যতগুলো মার্কেটিং মিডিয়া কার্যকরী এবং জনপ্রিয়, সেগুলোর মধ্যে ইমেইল মার্কেটিং অন্যতম। ইমেল মার্কেটিং এর মাধ্যমে তুলনামূলক কম সময়ে, সহজে এবং অল্প খরচে যে পরিমাণ মানুষের কাছে বিজ্ঞাপন পৌছে দেয়া যায়, ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে ওই একই কাজ করতে অনেক বেশি টাকা খরচ হয়। এমনকি ডিজিটাল মার্কেটিং এর অন্যান্য ক্ষেত্রসমূহের থেকেও ইমেইল মার্কেটিং বেশি কার্যকরী।

ইমেইল মার্কেটিং করার জন্য বিভিন্ন নৈতিক এবং অনৈতিক উপায়ে মার্কেটার কাস্টমারদের ইমেইল সংগ্রহ করে থাকে। এবং এক ক্লিকের মাধ্যমে হাজার হাজার কাস্টমারের কাছে নিজস্ব বিজ্ঞাপন পৌছে দেয়। এখানে নৈতিক এবং অনৈতিক- দুই ভাবে সংগ্রহ করা গেলেও গ্রাহকের থেকে ভালো রেসপন্স পাওয়া যায় শুধু নৈতিক পন্থা অবলম্বন করেই। অনৈতিকভাবে ইমেইল মার্কেটিং করলে তা কখনোই মার্কেটারের জন্য সুফল বয়ে আনে না। এটা বর্জনীয়। নিচে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

ইমেইল মার্কেটিং আসলেই উপকারী?

ইমেইল মার্কেটিং কতটা কার্যকরী তা বুঝার জন্য রকেট সায়েন্স বুঝতে হবে না। খুব সিম্পল কয়েকটি বিষয় চিন্তা করলেই ইমেইল মার্কেটিং-এর কার্যকারিতা সম্পর্কে বুঝা যাবে অনেকখানি। কয়েকটি পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করা হলো:

১. আপনি যখন ফেসবুক কিংবা ইউটিউবে বিজ্ঞাপন দেখছেন তখন আপনি তাকে কতটা গুরুত্ব দিন? 

২. কোনো ওয়েবসাইটে যখন আপনি কোনো আর্টিকেল বা ব্লগ পড়তে গিয়ে কোনো বিজ্ঞাপন দেখেন, তখন আপনি কতটা গুরুত্ব দিন?

৩. আপনার ইমেইলে কী মেইল আসলো এটাকে আপনি কতটা গুরুত্ব দিন?

এই তিনটি প্রশ্নের উত্তর নিজে নিজে দিনতো। তবেই বুঝতে পারবেন ইমেইল মার্কেটিং উপকারী কি-না? বা অন্যান্য মার্কেটিং মাধ্যমের থেকে ইমেল মার্কেটিং কেন বেশি প্রয়োজন। 

ইমেইল মার্কেটিং এর জগত আসলে কত বড়?

৭.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মার্কেট ছিলো ২০২০ সালেই। Intrado এর মতে ২০২৭ সালের মধ্যে ইমেইল মার্কেটিং এর মার্কেট পৌঁছে যাবে ১৭.৯ বিলিয়ন ইউএস ডলার। Marketing Insider Group এর তথ্য মতে প্রতি ১ ডলার খরচ করে ইমেইল মার্কেটিং এর মাধ্যমে ৪৪ ডলার আয় করা সম্ভব।

কোন কোন ক্ষেত্রে ইমেইল মার্কেটিং করে বেশি সফল হওয়া যায়?

সফলতার মাপকাঠিটা বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে। আপনি কোন অঞ্চলে আছেন তার উপর নির্ভর করবে, আপনি কাদেরকে অডিয়েন্স হিসেবে টার্গেট করছেন তার উপরও নির্ভর করবে। ইত্যাদি বিষয়ের উপরই আসলে এই বিষয়ের সফলতা কাউন্ট করা যায়। তবে Mailchimp এর এক গবেষণা মতে কয়েকটি ক্ষেত্র এবং তাদের CTR (ক্লিক থ্রু রেট) হার নিচে উল্লেখ করা হলো।

  • হবিস - ৫.১৩%
  • কৃষিপণ্য এবং খাদ্য পণ্য - ২.৯৮%
  • মিডিয়া এবং পাবলিশিং - ৪.৭০%
  • বাড়ি এবং বাগান - ৩.৪৭%
  • ই-কমার্স - ২.৩২%
  • গেমস - ৩.৩৩%
  • ছবি এবং ভিডিও - ৩.৪৯%
  • খেলাধুলা - ৩.১৭%

কীভাবে করব ইমেইল মার্কেটিং?

ইমেইল মার্কেটিং করার জন্য কয়েকটি মাত্র ধাপ অনুসরন করতে হবে। ধাপগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো নিচে।

১. পূর্ব পরিকল্পনা: আপনি আসলে কাদেরকে আপনার অডিয়েন্স করতে চান এ বিষয়টা সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি ক্রিকেট, ফুটবল রিলেটেড সামগ্রী বিক্রি করার বিজ্ঞাপন দিতে চান এবং বিজ্ঞাপন দেয়ার ক্ষেত্রে আপনার টার্গেট অডিয়েন্স হয় আসলে প্রোগ্রামাররা কিংবা বয়স্ক ব্যাক্তিরা যারা আসলে এ বিষয়ে খুব একটা বা মোটেও আগ্রহী না, তবে আপনার ইনভেস্টমেন্ট পুরোটাই মাটি হবে। তাই আপনি কেমন পণ্যের বিজ্ঞাপন দিতে চান, কারা সেই পণ্যের ক্রেতা, আপনার বাজেট কত এসব বিষয় নিয়ে পূর্ব পরিকল্পনা করা সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।

২. ইমেইল সংগ্রহ করা: ইমেইল মার্কেটিং করতে চাইলে অবশ্যই আপনাকে ইমেইল সংগ্রহ করতে হবে। এই ইমেইল সংগ্রহ করার অনেক গুলো উপায় আছে। কয়েকটি উপায় নিচে তুলে ধরা হলো:
  • আপনার ওয়েবসাইটে ভালো ভালো কন্টেন্ট দিন এবং সেখান একটি অপশন রাখুন ইমেইল সংগ্রহের। এক্ষেত্রে পাঠকরা যদি আপনার কন্টেন্ট থেকে উপকৃত হয়, তবে অবশ্যই সে চাইবে আপনাকে তার ইমেইল দিয়ে রাখতে যাতে করে আপনার থেকে পরবর্তী যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ আপডেট সে খুব দ্রুত পেতে পারে।
  • আপনার যদি ওয়েবসাইট না থাকে, তবে ফেসবুক, লিংকডইনের মতো স্যোশাল সাইটে ফ্রি ই-বুক দিতে পারেন। সেক্ষেত্রে ই-বুক সংগ্রহ করতে গেলে তার জন্য ইমেইলে দেয়া বাধ্যতামূলক হবে, এমনভাবে সিস্টেম তৈরি করুন। এক্ষেত্রে সে যদি আসলেই বইটি চায় এবং আপনার প্রতিষ্ঠানকে বা আপনাকে বিশ্বাসযোগ্য মনে করে, তবে সে আপনাকে তার ইমেইল দিতে চাইবে।
  • আপনি বিভিন্ন প্রতিযোগিতা, অনলাইন কর্মশালা, ফ্রি অনলাইন কোর্স ইত্যাদি অফার করতে পারেন। এর মাধ্যমে যারা আপনাকে বিশ্বাসযোগ্য মনে করবে তারাই কেবল তাদের ইমেইল আপনাকে দিয়ে সেসব রিসোর্স সংগ্রহ করতে চাইবে। 

ইমেইল সংগ্রহ করার সময় যারা ইমেইলে দেবে তাদেরকে কিছু বিষয় জানান এবং নিশ্চয়তা দিন। বিষয়গুলো হলো:
  • আপনি তাকে কোনো ধরনের স্প্যাম মেইল পাঠাবেন না।
  • আপনি তার তথ্য অন্য কাউকে দেবেন না।
  • যে কথাগুলো বলে আপনি তার থেকে ইমেইল চেয়েছেন, তার বাইরে অন্য কোনো কাজে তা ব্যবহার করবেন না।
  • আপনি তাকে মাসে বা সপ্তাহে কতবার ই-মেইল পাঠাবেন তা তাদেরকে জানিয়ে দিন।
  • এসব শর্তে সে রাজি কি-না তাও জেনে নিন এবং রেকর্ডে রাখুন।

ইমেইল সংগ্রহের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, ইমেইল লিস্ট কিনে না নেওয়া। কিনে নেয়া ইমেইল লিস্ট দিয়ে প্রমোশন করতে চাইলে যেসব সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন সেসব হলো:
  • আপনি অন্যের প্রাইভেসি নষ্ট করেছেন। তাই সে কখনোই আপনাকে বিশ্বাস করে আপনার পণ্য কিনতে আগ্রহী হবে না।
  • আপনার পাঠানো মেইলগুলোকে তারা Mark as spam করে দিতে পারে। এক্ষেত্রে কতগুলো মেইল স্প্যাম হিসেবে সেলেক্টেড হলে বাকি মেইল গুলোও সরাসরি ইনবক্সে না গিয়ে স্প্যাম বা জাংক মেইলে প্রবেশ করতে পারে, সেক্ষেত্রে আপনার টাকাগুলোর অপচয় হবে।
  • আপনি অন্যের প্রাইভেসি নষ্ট করেছেন, সেক্ষেতে আপনার বিপক্ষে চাইলে আইনানুগ ব্যবস্থাও নিতে পারে যা কখনোই আপনার জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না।
  • আপনি হাজারখানেক বা তারও বেশি ইমেইল নিজে নিজে পাঠাতে পারবেন না। আপনাকে ইমেইল মার্কেটিং প্রোভাইডারের থেকে সাহায্য নেয়া লাগবে। সেক্ষেত্রে ক্রয় করা মেইল লিস্ট দিয়ে তারা সার্ভিস প্রদান করে না।

৩. ইমেইল মার্কেটিং প্রোভাইডার নির্বাচন: হাজারখানেক বা তারও বেশি ইমেইল নিজে নিজে পাঠাতে পারবেন না। আপনাকে ইমেইল মার্কেটিং প্রোভাইডারের মাধ্যমেই কাজটি করতে হবে। সেক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই ভেবে চিন্তে, রিভিউ দেখে প্রোভাইডার সেলেক্ট করতে হবে। কয়েকটি সেরা ইমেইল মার্কেটিং প্রোভাইডারের মধ্যে আছে Mailchimp, AWeber, Getresponse ইত্যাদি।

৪. আই ক্যাচিং সাবজেক্ট নির্বাচন: আপনার ইমেইলের সাবজেক্টের উপরেই অনেকাংশে নির্ভর করে গ্রাহক তা পরে দেখবে কি-না। তাই একটি মাইন্ড ব্লোয়িং সাবজেক্ট নির্বাচন করা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ ইমেইল মার্কেটিং-এ।

৫. ভালো টেমপ্লেট নির্বাচন: প্রমোশনাল মেইল গুলো সাধারণ মেইলের মতো হয় না। বিভিন্ন টেমপ্লেট এর মাধ্যমে তথ্যকে সুন্দর করে সাজিয়ে উপস্থাপন করতে হয়। সেক্ষেত্রে আপনার পণ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি টেমপ্লেট নির্বাচন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ইমেইল মার্কেটিং এর জন্য মূল যে বিষয়গুলো মাথায় রাখা প্রয়োজন সেগুলো মোটামুটি এগুলোই। এর বাইরে আপনি আরও যে কাজ গুলো করতে পারেন তার মধ্যে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ হলো পর্যবেক্ষণ করা। আপনি কেমন সাড়া পাচ্ছেন, কম পেলে কেনো কম পাচ্ছেন, বেশি পেলে এই রেট ধরে রাখা যায় কীভাবে, আরও বাড়ানো যায় কীভাবে এসব বিষয় নিয়ে বিশ্লেষন করতে হবে প্রতিনিয়ত। 

আপনার ইমেইল মার্কেটিং-এ সফলতার জন্য শুভ কামনা জানিয়ে আপাতত এখানেই শেষ করছি। ফেসবুক থেকে টাকা আয় করার পদ্ধতি জানতে পড়তে পারেন: ফেসবুক থেকে টাকা ইনকাম করার সেরা ৫ টি উপায়। তাহলে আজ এ পর্যন্তই।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.