অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর সম্পূর্ন গাইডলাইন PDF Download

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, শব্দটি বেশ কয়েক বছর ধরে আমাদের খুব পরিচিত একটি শব্দ। বিভিন্ন ইউটিউবার এবং ব্লগারদের মুখে প্রায়ই শুনে থাকি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয় করা যায়। কিন্তু আমাদের দেশে এই টার্মটি এখনো ঠিক ততটা জনপ্রিয় হয়ে উঠেনি বিধায় এ বিষয়ে অনেকেরই সঠিক ধারনা নেই। তাই আজ ডিফারেন্ট মার্কেটিং এর পক্ষ থেকে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বিষয়ে মোটামুটি বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করবো এই আর্টিকেলে।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর সম্পূর্ন গাইডলাইন PDF Download


প্রথমেই দেখে নিই এই আর্টিকেলে আমরা ঠিক কোন কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাচ্ছি। 

এই আর্টিকেলে আমরা নিচে উল্লেখিত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করব।

  • অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কি?
  • বাংলাদেশে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর সুযোগ কেমন?
  • অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের সুবিধাগুলো কি কি?
  • অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর জন্য কোন ধরনের স্কিল প্রয়োজন?
  • কিভাবে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে পারি?
  • অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং থেকে কত টাকা আয় করা যেতে পারে?


অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কি?

ধরুন, আমার কাছে পন্য আছে কিন্তু ক্রেতা নেই। আপনার কাছে ক্রেতা আছে, কিন্তু কাস্টমার নেই। এখন আমি আপনাকে বললাম, “ভাই, আমার এই পন্যের প্রমোট করুন আপনার কাছে থাকা ক্রেতাদের মাঝে। আপনার প্রমোটের ফলে যতগুলো বিক্রি হবে, তাঁর উপর আপনি ২০% কমিশন পাবেন।“ আপনিও আমার প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলেন। এখানে আপনি যে মার্কেটিংটি করলেন তাই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। 

অর্থাৎ বিভিন্ন কোম্পানির প্রোডাক্ট প্রোমোট করে অন্যদের কেনাতে পারলে প্রতি বিক্রির বিপরীতে কমিশন পাওয়ার যে প্রক্রিয়া, তাই-ই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। 


উদাহারণস্বরূপ বলতে গেলে বলা যায়, ই-শিখন ডট কম, বিবিসি বাংলা ইত্যাদি সাইট তাদের বিভিন্ন অনলাইন কোর্স বিক্রির জন্য বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় আতিক ভাই, কেটো ভাই সহ আরও অনেককে দিয়েই প্রমোট করিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে কন্টেন্ট ক্রিয়েটররা তাদের তৈরি কন্টেন্টের কোনো এক ফাঁকে সেই প্রোডাক্টিকে সরাসরি কিংবা পরোক্ষভাবে প্রমোট করে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে থাকে। বিশ্বে সবথেকে বড় অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং প্লেস হলো Amazon।


শেষ কথা হচ্ছে, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং-এ মোট ৩ টি পক্ষ থাকে। 

  • বিক্রেতা
  • ইনফ্লুয়েন্সার (ইনিই মূলত অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার)
  • ক্রেতা


বাংলাদেশে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর সুযোগ কেমন?

সর্বশেষ প্যারাতে দেয়া উদাহারণ দুটি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট থেকেই নেয়া। অর্থাৎ বাংলাদেশে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করার সুযোগ যথেষ্ট আছে। তবে এক্ষেত্রে আপনাকে অডিয়েন্স জোগাড় করতে হবে। ফেসবুক কিংবা ইউটিউবে যারা জনপ্রিয় তারা খুব সহজেই যে পরিমান টাকা এভাবে আয় করতে পারবেন, আপনি বা আমি এতো সহজে সে পরিমাণ আয় করতে পারবো না। তবে চেষ্টা করতে থাকলে একদিন সফলতা ধরা দিতেই পারে। 


অর্থাৎ এক কথায় উত্তর হচ্ছে, বাংলাদেশে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর সুযোগ যথেষ্ট ভালো। আর হ্যাঁ, Amazon এর নাম যে বললাম, তাদের সাথেও আপনি অ্যাফিলিয়েট করতে পারবেন যদি আপনার কাছে অডিয়েন্স থাকে। অর্থাৎ বাংলাদেশে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর ভবিষ্যৎ এখনো পর্যন্ত যথেষ্ট ভালো। তবে এর জন্য নিজেকে তৈরি করতে হবে। 


অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং-এর সুবিধা গুলো কি কি?

১. সবথেকে বড় সুবিধা গুলোর একটি হলো, এটি আপনি শুরু করতে পারবেন কোনো ধরনের পুঁজি ছাড়া বা নাম মাত্র পুঁজিতে। তবে হ্যাঁ, সফলতা যতদিনে পাবেন ততদিনে আপনি নিজ থেকেই কিছু ইনভেস্ট করে বসবেন আর এটাই উচিত। 


২. অ্যাফিলিয়েটে আপনি স্বাধীন। কেউ আপনাকে বলবে না, “এটা কেনো করলে? ওটা কেনো করলে না?” আপনার যখন ইচ্ছা রেফার করবেন, যখন ইচ্ছা করবেন না। অর্থাৎ, ব্যক্তিস্বাধীনতা এর আরেকটি সুবিধা।


৩. এখানে আপনার নিজের কোনো পণ্য নেই। তাই পণ্য সংরক্ষণ, ভোক্তার কাছে পাঠানো এসব বিষয়ে চিন্তাও নেই আপনার। অন্যের প্রোডাক্ট বিক্রি করে কমিশন পাওয়া যাচ্ছে এতে করে।


অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর জন্য কোন ধরনের স্কিল প্রয়োজন?

আপনি বিভিন্নভাবে এই মার্কেটিং করতে পারেন। আপনি যদি ভালো ভিডিও কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হতে চান তবে ভিডিও তৈরির স্কিল প্রয়োজন আপনার। আপনি যদি ওয়েবসাইট/ব্লগ সাইট থেকে মার্কেটিং করতে চান, তবে ভালো কন্টেন্ট রাইটিং স্কিল প্রয়োজন। এসব বাদ দিলে শুধু অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং-এর জন্য আপনার যে সকল স্কিল প্রয়োজন সেগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি হলো:

  • সমস্যা ভালোভাবে এবং দ্রুত সমাধান করার দক্ষতা
  • সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার যোগ্যতা
  • মার্কেটিং কৌশল সম্পর্কে ভালো ধারণা
  • কমিউনিকেশন স্কিল
  • তথ্য বিশ্লেষণ ক্ষমতা
  • সার্চ ইঞ্চিন অপটিমাইজেশন
  • ম্যানেজমেন্ট স্কিল


এছাড়া আপনি যদি বৈশ্বিক বাজারে অ্যাফিলিয়েট করতে চান, তবে আপনার এসবের সাথে প্রয়োজন হবে ইংরেজি ভাষাকে ভালোভাবে রপ্ত করা। আর হ্যাঁ, ব্যক্তিগত মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে এতো কিছু জানার প্রয়োজনও নেই আসলে।


কিভাবে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে পারি?

এক্ষেত্রে আপনাকেই খুঁজে নিতে হবে, ঠিক কি ভাবে আপনি আপনার অডিয়েন্সের কাছে ভালোভাবে পৌঁছাতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আমরা কিছু তথ্য দিয়ে আপনার খুঁজে নেয়াতে সাহায্য করতে পারি।


১. আপনি যদি ইউটিউবার বা ফেসবুকে ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি করে থাকেন, তবে আপনি ভিডিওর মধ্যেই তাদের রিভিউ, প্রমোট করতে পারেন। যেমনটা আমাদের দেশে আতিক ভাই, কেটো ভাই, সোহাগ ৩৬০, আরএনএআর সহ আরও অনেকেই করে থাকেন। 


২. আপনি যদি ওয়েব সাইট ভিত্তিক মার্কেটিং করতে চান, তবে আপনার উচিত প্রথমে একটি সঠিক নিশ বাঁচাই করে ব্লগিং শুরু করা। এক্ষেত্রে আপনাকে আগেই ঠিক করে নিতে হবে আপনি কোন ধরনের পণ্যের মার্কেটিং করতে চান। 

আপনি যদি টেকনোলজি রিলেটেড পণ্যের মার্কেটিং করতে চান, তবে আপনার উচিত টেক নিশের উপর ওয়েব সাইট শুরু করা। আপনি যদি শুধু বাংলাদেশের ভেতরে মার্কেটিং সীমাবদ্ধ রাখতে চান, তবে আপনি বাংলায় কন্টেন্ট শুরু করতে পারেন। আর বিশ্ব বাজার যদি টার্গেট থাকে, তবে আপনি শুরু করুন ইংরেজিতে। ব্লগিং গাইডলাইন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জানতে লিংকড আর্টিকেলে ক্লিক করুন। 


৩. পণ্য নির্বাচন করতে হবে ডেটা এনালাইস করে। আপনার অডিয়েন্সের বয়স কত, তারা পুরুষ নাকি নারী, তাদের জন্য উপযুক্ত কিংবা তাদের পছন্দ কোন ধরনের প্রোডাক্ট, তাদের ক্রয়ক্ষমতা কেমন, কোন দেশের নাগরিক এসব দিক বিবেচনা করেই আপনাকে আপনার অডিয়েন্সের জন্য পণ্য তুলে ধরতে হবে। 

আপনার অডিয়েন্স যদি থাকে ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে, আর আপনি যদি বিক্রি করতে বসেন ওয়েবক্যাম, তাহলে আপনি ততটা সাড়া পাবেন না, যতটা আপনি জার্সি বিক্রি করলে পাবেন।


৪. কাদের পণ্যের মার্কেটিং করছেন? আপনি কি এমন কারো পণ্যের মার্কেটিং করছেন যাদের থেকে আপনি নিজেই কিছু কিনবেন না কারণ তারা খুব বাজেভাবে কাস্টমারকে ট্রিট করে। কিংবা ডেলিভারিতে দিতে অনেক সময় লাগে, এক পণ্য দেখিয়ে অন্য পণ্য বিক্রি করে এমন কোনো কোম্পানির প্রমোট করা আপনার উচিত হবে না আপনার নিজের অডিয়েন্স ধরে রাখার জন্যই।


৫. বিভিন্ন সাইটের অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। আপনি যদি Amazon এর সাথে কাজ করতে চান, তাহলে তাদের অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। বাংলাদেশেও আপনি করতে পারেন। ‘বহুব্রীহি’ অনলাইন কোর্স প্লাটফর্ম থেকেও করতে পারেন। 

এক্ষেত্রে প্রত্যেকে আলাদা আলাদা রেফারাল লিংক পেয়ে থাকেন, যেটাতে ক্লিক করে কী কিছু কিনলে তাঁর কমিশন মার্কেটার পাবেন।


অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং থেকে কত টাকা আয় করা যেতে পারে?

এ প্রশ্নের উত্তর আসলে এভাবে দেয়া সম্ভব না। এক্ষেত্রে আপনার পুরো আয়টা নির্ভর করে থাকে বিক্রির সংখ্যার উপর এবং কমিশন রেটের উপর। আপনি যদি ২ হাজার টাকার কোনো পণ্য বিক্রি করেন এবং কমিশন রেট যদি ১০% থাকে, তবে আপনার আয় হবে প্রতি বিক্রিতে ২০০ টাকা। এখন আপনি যত বেশি অডিয়েন্সকে কেনাতে পারবেন তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী, আপনার লাভ তত বেশি। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং থেকে কয়েক লক্ষ টাকা যেমন আয় করা যায়, তেমনি অনেকে ২/৪ টির বেশি সেলই করতে পারেন না। এটা আপনার উপর নির্ভরশীল। 


ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কে আরও জানতে যুক্ত থাকুন ‘ডিফারেন্ট মার্কেটিং’এর সাথেই। চাইলে এখানে ক্লিক করে ভিজিট করে দেখে নিতে পারেন ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কিত ভালো কিছু অনলাইন কোর্সও। এই আর্টিকেলটির PDF ডাওনলোড করতে ক্লিক করুন এখানে

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.